জয়নুল আবেদীন,সাঘাটা প্রতিনিধি: জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি গত ২৩ জুলাই মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা (সাঘাটা-ফুলছড়ির )-৫ আসনটি শূন্য হয়ে পড়েছে। পরদিন ২৪ জুলাই জাতীয় সংসদের সচিবালয় থেকে এবিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কোনও সংসদীয় আসন শূন্য হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনে উপ নির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। একারণে শূন্য এ অসনটিতে উপনির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতি দলের নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নানা জলপনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেকে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোট মেয়ে বিচারপতি খুরর্শিদ আলমের স্ত্রী ফারজানা রাব্বী বুবলী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. গোলাম শহীদ রঞ্জু নাম শোনা যাচ্ছে।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। এ আসনে দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে আশাবাদী হয়ে উঠছে সাঘাটা-ফুলছড়ির সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন- নিজগুণে যদি জিততে হয়, তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সফল সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনই একমাত্র নেতা। যিনি এই আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন। অন্য কোনো দলের যতবড় নেতাই এখানে প্রার্থী হোক না কেন, তারা মাহমুদ হাসান রিপনের ধারের কাছেও পৌছিতে পারবে না ।
কারণ দীর্ঘ ১৫টি বছর ধরে সাঘাটা-ফুলছড়িরর সাধারণজনগণ মাহমুদ হাসান রিপন চিনেছে এবং জেনেছে। তিনি অক্লান্ত শ্রম, ত্যাগ ও মেধা কাজে লাগিয়ে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত দুর্গম চরসহ দুই উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড,গ্রাম ও পাড়ায় ঘুরে ঘুরে তৃণমুলের সুবিধাবঞ্চিত নেতা কর্মীদের পাশে থেকে শক্তি,সাহস যোগিয়ে দুই উপজেলায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে নিজেকে আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । তাই দলীয় কর্মী-সমর্থকসহ এলাকাবাসী মনে করেন আগামী উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে মাহমুদ হাসানের বিকল্প কোন প্রার্থী নেই।তাকে নৌকা প্রতীক দিলে বিজয় সুনিশ্চিত হবেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হিসেবে মাহমুদ হাসান রিপনকেই আগামী উপ-নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।
মাহমুদ হাসান রিপন এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁকে রাজনীতে এনেছেন তার আদর্শের বাহিরে যাওয়ার সাধ্যমার তার নেই । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে নৌকার বিজয় এনে দিয়ে প্রমান করতে চান জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে আছে ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টার্নেল নির্মাণে উদ্যোগ নিবেন। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবেন। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে গাইবান্ধা শহর থেকে সোনাতলা হয়ে মোকামতলা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ এবং বোনারপাড়া রেলজংশন আধুনিকায়নসহ দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবেন। এদিকে প্রয়াত ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়ার অনুসারী নেতা-কর্মীরা এখনো অন্য কোনো নেতা নৌকার মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে নয়। তার মনে করে
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের ইমেজ ব্যবহারের পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে। একারণে উপ-নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে মাঠে নেমেছেন তাঁর মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী পক্ষে। ফারজানা রাব্বী বুবলী ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি তাঁর বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেন, ফুলছড়িতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি, সাঘাটায় বাবার বাড়ি। নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার ভোটার তাঁর আত্মীয়স্বজন। তাই নির্বাচনে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন এ বিশ্বাস নিয়ে তার এবং ডেপুটি স্পীকারের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড সাঘাটা-ফুলছড়ির রাস্তায় রাস্তায় নটকিয়ে নিজেকে উপ-নির্বাচনে এমপি প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। তার বাবার (ফজরে রাব্বী মিয়ার) অনুসারী নেতা কর্মীদের নিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরে উপ-নির্বাচনে দোয়া ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে উপ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণ সংযোগ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যান্তরীন দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে চায় এখানকার জাতীয় পার্টি। তারা মনে করেন আসনটি এক সময় জাতীয় পার্টির ছিলো । পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের হাতে যায়। আবারো ফিরে পাওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি উপনির্বাচনে অংশ নিবে কি নিবে না সিদ্ধান্ত হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্ধারণের পর।
এ্যাড. গোলাম শহীদ রঞ্জু জানান, জাতীয় পার্টি উন্নয়নের বিশ্বাসী। পরপর দুই বার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান সফলতার সাথে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সুযোগ পেলে এলাকার উন্নয়ন করে করবো। তবে বর্তমান সরকারের আমলে ভোট নিয়ে সংশয় আছে। তা ছাড়া ইভিএমে ভোট হলে পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা অথবা জনেগণের সাথে নেই এমন কাউকে আওয়ামী লীগের মনেনয়ন দেয়া হলে ত্যাগী নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসির মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিই নির্বাচনী সুফল ভোগ করার সম্ভাবনা থাকবে।
Check Also
গোবিন্দগঞ্জে বিষ দিয়ে পুকুরের ২৫ লাখ টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ
মনজুর হাবীব মনজু,গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে লীজ নিয়ে চাষ করা একটি …